ইব্রাহিম বা ইব্রাহীম সম্মানার্থে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাম (আরবি: ابراهيم, হিব্রু ভাষায়: אַבְרָהָם) তোরাহ অনুসারে আব্রাহাম (আনুমানিক জন্ম: অজানা)। ইব্রাহিম (আব্রাহাম নামেও পরিচিত) হলেন ইসলাম এবং ইহুদি ধর্ম সহ আব্রাহামিক ধর্ম গুলির একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ইব্রাহিমকে ইসলামের একজন নবী এবং মুসলিমদের জাতির পিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কুরআন, হাদিস এবং মুসলিমদের অন্যান্য ইসলামিক গ্রন্থে ইব্রাহিমের কাহিনী বর্ণিত করা হয়েছে। তার জীবন কাহিনী এবং শিক্ষা সারা বিশ্বে মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। মুসলমানদের একটি নতুন দিক দেখিয়েছে মুসলিমদের জাতির পিতা ইব্রাহিম।
Table of Contents
“ইব্রাহিম আঃ এর জীবনী – “Hajrat Ibrahim Biogaphy in Bengali“
ইব্রাহিম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী (Brief biography of Ibrahim)
জন্ম | কল্দীয় দেশের ঊর, ইরাক |
মৃত্যু | হিব্রোণ, সাম |
সমাধি | ইব্রাহিম মসজিদ,হিব্রোণ |
অন্যান্য নাম | খলিলুল্লাহ (আরবি: خَلِيْلُ ٱللهِ, “আল্লাহর বন্ধু”) অব্রাহাম (হিব্রু ভাষায়: אַבְרָהָם) |
উত্তরসূরী | লূত |
দাম্পত্য সঙ্গী | সারা,হাজেরা,কটূরা |
সন্তান | ইসমাইল (ইশ্মায়েল), ইসহাক (ইস্হাক) ও অন্যান্য |
পিতা মাতা | তেরহ বা আজার |
আত্মীয় | লূত |
প্রারম্ভিক জীবন এবং পরিবার (Early life and family)
ইরাকের ওর শহরে ইব্রাহিম খ্রিস্টপূর্ব 21 দশকে জন্মগ্রহণ করেন। ইব্রাহিম একটি বহু ঈশ্বরবাদী পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন। তার পিতার নাম হল আজর যিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট মূর্তি নির্মাতা। কিন্তু ইব্রাহিম তার পিতার মূর্তিপূজাকে পছন্দ করতেন না একাধিক দেবতার অস্তিত্ব নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন তার পিতার কাছে।
ইব্রাহিম একজন সৎ যুবক হিসেবে সত্যের সন্ধানে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছিলেন। অবশেষে ইব্রাহিম আধুনিক তুরস্কের হারান শহরে বসতি স্থাপন করেন. সেখানে তার সৎ বোন সারাকে(সারা) বিয়ে করেন।এছাড়াও ইব্রাহিম হাজরের (হাজেরা) সাথেও বিয়ে করেছিলেন। হাজেরা ছিলেন একজন দাসী। হাজেরা এবং ইব্রাহিম তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন যার নাম হলো ইসমাইল।
ইসলাম গ্রহণ ও নবুওয়াত (Acceptance of Islam and Prophethood)
ইব্রাহিমের বয়স যখন 40 বছর তখন ইব্রাহিম ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে ইব্রাহিম, তার প্রথম ঐশ্বরিক প্রকাশ পেয়েছিলেন। এই 40 বছর বয়সে ইব্রাহিম একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। যেখানে তাকে আল্লাহর( ঈশ্বরের) কাছে আত্মসমর্পণ করতে এবং তার ঐ উপাসনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল. এইরূপ ঘটনা ঘটার পরে ইব্রাহিম এটিকে সত্য বলে স্বীকার করে সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন।
একের পর এক অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে ইব্রাহিমের নবুওয়াত নিশ্চিত করা হয়েছিল। বিভিন্ন রকম অলৌকিক ঘটনা ঘটে ইব্রাহিমের সাথে যেমন তার লোকেরা তাকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল কিন্তু আল্লাহ তাকে আগুন থেকে রক্ষা করেছিল। এছাড়াও ইব্রাহিমের বিশ্বাসের পরীক্ষা করার জন্য তার পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ দিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তার পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে কুরবানী করার জন্য একটি মহিষ সরবরাহ করেছিল।
আরো জানুন>> রাবেয়া বসরীর জীবনী – Rabi Basri Biography In Bengali
একেশ্বরবাদ এর প্রতি ইব্রাহিমের আহ্বান(Abraham’s Call to Monotheism)
একেশ্বরবাদ এবং ইসলাম ধর্মের জন্য বিভিন্ন মানুষকে আহ্বান করার জন্য ইব্রাহিমকে তার নিজের পিতা এবং তার সময় শক্তিশালী শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতা করতে হয়েছিল।
একজন সৎ নবী হিসেবে ইব্রাহিমের লক্ষ্য ছিল মানুষকে একমাত্র আল্লাহর উপাসনার দিকে আহবান করা এবং মিথ্যা দেবতার পূজাকে প্রত্যাখ্যান করা। এই সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য ইব্রাহিমকে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
তিনি সমস্ত চ্যালেঞ্জ গুলি গ্রহণ করেন. ইব্রাহিমের বিশ্বাস অবিচল থাকার কারণে তিনি সমস্ত মানুষকে একেশ্বর বাদের দিকে আহবান করতে থাকেন।এরপর তিনি বাড়ি ছেড়ে মক্কা শহরে চলে যান এবং সেখানে তার পুত্র ইসমাইলের সাথে ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা নির্মাণ করেন। এরপর ইব্রাহিম ছাড়া আরব থেকে মানুষকে কাবা শরীফে এসে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
ইব্রাহিমের সহানুভূতি ও উদারতা (Abraham’s Compassion and Generosity)
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং একেশ্বরবাদ এর প্রতি তার প্রতিশ্রুতি এই সমস্ত গুনাহগুলি ছাড়াও ইব্রাহিম তার ব্যক্তিগত গুণাবলীর জন্য বিখ্যাত। ইব্রাহিম ছিলেন করুণা এবং উদারতাসীন মানুষ। এছাড়াও অন্যান্য মানুষদের বিপদে আপদে নেই সাহায্য করার জন্য পরিচিত ছিলেন।
একবার ইব্রাহিমের বাড়িতে তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি আসেন। ইব্রাহিম তাদেরকে স্বাগত জানাই এবং তাদের খাবার ও পানীয় সরবরাহ করে। এরপর ইব্রাহিম বুঝতে পারেন যে এই অপরিচিত মানুষেরা আসলে আমার আতিথেয়তা পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ প্রেরিত ফেরেশতা। এই গল্পটি প্রায়শই ইব্রাহিমের সহানুভূতি এবং উদারতার উদাহরণ দিয়ে থাকে। এছাড়াও এই গল্পটির দয়া ও সম্মানের সাথে আচরণ করার জন্য শিক্ষা দিয়ে থাকে বিভিন্ন মানুষদের।
ইসলামে ইব্রাহিমের উত্তরাধিকারী (Heirs of Abraham in Islam)
ইব্রাহিম কে প্রায়শই “খলিখুল্লাহ” বলা হয়ে থাকে। যার অর্থ হল “আল্লাহর বন্ধু”। ইব্রাহিম হলেন ইসলাম বিশ্বাসের আদর্শ এবং আদর্শ হিসেবে সম্মানিত। ইব্রাহিমকে ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইব্রাহিমের এই আত্মত্যাগ কে স্মরণ করতে এবং তার শিক্ষা অনুসরণ করার জন্য অসংখ্য মুসলমানরা প্রতিবছর মক্কায় হজযাত্রা করেন। এছাড়াও ইব্রাহিমের পুত্রকে উৎসর্গ করার জন্য অসংখ্য মুসলমানরা ঈদ উল আধা উৎসব উদযাপন করে থাকে।
এক কথায় ইব্রাহিম ছিলেন একজন নম্র, দয়া এবং উদারতাশীল গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ। ইব্রাহিম তার পরিবার বন্ধুবান্ধব এবং মানুষদের জন্য গভীরভাবে যত্নশীল ছিলেন।
ইব্রাহিমের বিশ্বাস এবং একেশ্বরবাদ এর উত্তরাধিকারী (Inheritance of Abrahamic faith and monotheism)
ইব্রাহিমের ইসলামের প্রতি সবচেয়ে স্থায়ী উত্তরাধিকারী গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্বাসের প্রতিকার অটল অঙ্গীকার এবং একেশ্বরবাদ এর প্রতি তার আহ্বান। ইব্রাহিমসমাজে প্রচলিত মূর্তিপূজা কখনোই তিনি মেনে নিতে পারেননি। সেজন্য ইব্রাহিম তার পূর্বপুরুষদের বিশ্বাসকে সহজে মেনে নিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। এই জন্য তিনি সত্যের সন্ধান করেছিলেন এবং যখন তিনি এটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন তখন আন্তরিকভাবে ইব্রাহিম এটিকে গ্রহণ করেছিল। ইব্রাহিম এমন একজন নবী ছিলেন যে দ্বিধা বা সন্দেহ ছাড়াই আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার সাহস, প্রতিকূলতা এবং আল্লাহর প্রতি তার অটল ভক্তির জন্য তাকে স্মরণ করা হয়।
ইব্রাহিম হলেন বিশ্বাস এবং একেশ্বরবাদের উত্তরাধিকারী। বিশ্বজুড়ে প্রতিটি মুসলমানদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
ইসলামী আচার অনুষ্ঠানে ইব্রাহিমের গুরুত্ব (Importance of Ibrahim in Islamic rituals)
ইসলামী আচার অনুষ্ঠানে ইব্রাহীম হলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ইব্রাহিম একজন নবী এবং ধর্মীয় নেতা হিসাবে তার ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রসারিত।
উদাহরণস্বরও –
মক্কায় হজ যাত্রা করার সময় মুসলমানরা একটি পশু জবাই করে এবং গরিবদের মধ্যে সেই পশুর মাংস বিতরণের মাধ্যমে ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাইলের বলিদানের ঘটনাটিকে স্মরণ করে।
ঈদ উল যুহা অনুষ্ঠানেও ইব্রাহিমকে স্মরণ করা হয় তার ইসলামের প্রতি আত্মত্যাগ কে স্মরণ করা হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রার্থনায় অংশ নেন এবং পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে খাবার ভাগ করে এবং দরিদ্র ও অভাবীদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে এই উৎসবটি উদযাপন করেন।
খৎনা করণ (circumcision)
কোন কোন ইসলামী পন্ডিতদের মতে ইব্রাহিম প্রথম মিসওয়াক করেন। সর্বপ্রথম ইব্রাহিমের মাথার চুল পেকে সাদা হয়েছিল এবং তিনি প্রথম খৎনা করেন এবং তার বংশধরদের তা করতে উৎসাহিত করেন।
উপসংহার (Conclusion)
মুসলিম বিশ্বে ইব্রাহিমের জীবনী ও শিক্ষা সমগ্র মানবতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তার একেশ্বর বাদের বার্তা এবং ভক্তির উদাহরণ আজও সারা বিশ্বে মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। ইব্রাহিমের জীবনের এই গল্পটি অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যেও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা যোগায়। অসংখ্য মুসলমানরা যেমন ইব্রাহিমকে পথনির্দেশ ও অনুপ্রেরণা উৎস হিসেবে দেখছে,তার উত্তরাধিকার অব্যাহিত থাকবে।
অসংখ্য মুসলমানরা ইব্রাহিমকে তাদের জীবনের রোল মডেল হিসেবে মনে করে থাকেন। তার চরিত্রের গুণাবলী গুলি নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
“ইব্রাহিম আঃ এর জীবনী – “Hajrat Ibrahim Biogaphy in Bengali” – FAQ
Q-1.ইব্রাহিম আঃ কত বছর বয়সে সন্তান লাভ করেন?(At what age did Ibraham have a child?)
Ans.ইব্রাহিম 86 বছর বয়সে স্ত্রী সবার অনুরোধে হাজেরাকে বিয়ে করেন এবং বিবি হাজেরার করবে ইসমাইলের জন্ম হয় ?
Q-2.ইব্রাহিম নবীর পিতার নাম কি?(What is the name of Prophet Ibraham’s father?)
Ans.ইব্রাহিম নবীর পিতার নাম হল আজর।
Q-3.ইব্রাহিম নবীর বয়স কত ছিল?(How old was Prophet Ibrahim?)
Ans.ইব্রাহিম নবীর বয়স ছিল 90 বছর।
Q-4.ইব্রাহিম নবীর কয় সন্তান ছিল?(How many children did Prophet Ibrahim have?)
Ans.ইব্রাহিম নবীর আর্ট পুত্র ছিল।
“ইব্রাহিম আঃ এর জীবনী – “Hajrat Ibrahim Biogaphy in Bengali“
অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই পোস্টটি “ইব্রাহিম আঃ এর জীবনী – “Hajrat Ibrahim Biogaphy in Bengali” পড়ার জন্য।এই পোস্টটি “ইব্রাহিম আঃ এর জীবনী – Hajrat Ibrahim Biogaphy in Bengali” কেমন লাগলো তা কমেন্টের মাধ্যমে জানান। আশা করি পোস্টটি আপনাদের কে শাস্তি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে সাহায্য করেছে।আমরা এই সমস্ত তথ্যগুলি অনেক রকম ভাবে ভালোভাবে অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি।যদি কোনো তথ্য ভুল মনে হয়ে থাকে তাহলে মন্তব্য ফর্মটি পূরণ করে আমাদেরকে শেয়ার করতে পারেন।এরকম আরো মানুষের জীবনী সম্পর্কে জানতে আমাদের এই সাইটটিকে bongbio.com ফলো করুন।