রাবিয়া আল-আদাউইয়্যা আল-কায়সিয়া (আরবি : رابعة العدوية القيسية ; 717 – 801 খ্রিস্টাব্দ) হলেন একজন মহিলা মুসলিম সাধক এবং সুফি রহস্যবাদী একজন মানুষ। তিনি বছরে জন্মগ্রহণ করার কারণে তাকে রাবিয়া আল বছরে বছরে বলা হয়। রাবিয়া ছিলেন খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তিনি ছিলেন তার পরিবারের চতুর্থ কন্যা তাই তার নাম রাবিয়া যার অর্থ হল চতুর্থ। রাবিয়া হুলেন একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ইতিহাস জুড়ে মুসলমানদের দ্বারা সম্মানিত একটি উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
Table of Contents
রাবিয়া বসরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী (Brief Biography of Rabia Basri)
জন্ম | 714 থেকে 718 খ্রিষ্টাব্দ |
মৃত্যু | 801 খ্রিষ্টাব্দ |
উপাধি | আল – বসরী |
জন্মস্থান | ইরাক |
জাতিভুক্ত | আরব |
মূল আগ্রহ | সূফিবাদ, ঐশ্বরিক প্রেম |
উল্লেখযোগ্য ধারণা | ঐশ্বরিক প্রেম |
রাবেয়া বসরীর জীবনীর প্রথমার্ধ (The first half of Rabeya Basri’s Biography)
ধর্মভীরু রাবেয়া বসরীর জন্মগ্রহণ করেন ইরাকের বসরা নগরীতে একটি দরিদ্রপল্লী পরিবারে। তার জন্মগ্রহণ এবং জন্ম তারিখ নিয়ে বিভিন্ন রকমের মতবাদ রয়েছে। তিনি 95 হিজরী তে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে মনে করা হয় কিন্তু মতান্তরে 99 হিজরীর 719 খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইরাকের বসরা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে মনে করা হয়।
পিতার নাম | ইসমাঈল |
মাতার নাম | মায় ফুল |
রাবিয়া বসরী এবং তাদের পরিবার প্রচুর দরিদ্র ছিলেন কিন্তু পরম ধার্মিকও ছিলেন। রাবেয়া ছোট থেকেই ভদ্র নম্র প্রকৃতির। একজন আল্লাহর একজন প্রকৃত ওলি হওয়ার জন্য যা যা গুণাবলী থাকার প্রয়োজন তার সমস্ত রকমই রাবিয়া বসরের মধ্যে ছিল। ছোট থেকেই রাবিয়া প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী এছাড়া সব সময় একটি গভীর চিন্তা ধারায় ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন। রাবিয়া বসরীর পরিবার এতটাই দরিদ্র ছিল যে বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানোর মতো তেল থাকত না। এছাড়াও কাপড় মোড়ানোর মতো কাপড় ও ছিল না। রাবিয়া বসরীর মা তার স্বামীকে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিছু তেল ধার করতে বলেছিল তার মা কিন্তু রাবিয়ার বাবা জীবনে সংকল্প করেছিলেন যে ঈশ্বর ছাড়া কারো কাছে তিনি কিছু চাইবেন না এইরূপ সংকল্প করার দরুন সে প্রতিবেশীর দরজায় যাওয়ার ভান করে খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসে। রাতে মুহাম্মদ তাকে স্বপ্ন দেখা দিয়ে বলেন –
“ আপনার নবজাত কন্যা প্রভুর প্রিয় এবং অনেক মুসলমানকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে। আপনি বছর আর আমিরের কাছে যান এবং তাকে একটি চিঠি পেশ করুন তাকে এই বার্তাটি লেখা উচিত: আপনি পবিত্র দরুদ প্রতি রাতে 100 বার এবং প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে 400 বার পাঠ করুন. যেহেতু আপনি গত বৃহস্পতিবার নিয়ম পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাই আপনাকে 400 দিনার জরিমানা দিতে হবে”
রাবিয়া বসরীকে রাগ হিংসা অহংকার কোন কিছুই তার চরিত্রকে কলুষিত করতে পারেনি। রাবিয়া তার জীবনের বিপদ-আপদ গুলিকে কখনোই ভয় পেতেন না বরং তিনি পরীক্ষা হিসেবে সেগুলিকে গ্রহণ করতেন। বিপদ-আপদ গুলিকে কখনোই ভয় পেতেন না বরং তিনি পরীক্ষা হিসেবে সেগুলিকে গ্রহণ করতেন। রাবিয়া বসরী একটি মনিবের কাছে কাজ করতেন। তার মনিবটি ছিল প্রচুর নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক।তাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে কাজ করাতো। মনিবের নির্ধারিত কাজ শেষ করার পর মহান রবের ইবাদতে মশগুল হয়ে যেতেন রাবিয়া বসরী। তার মূলত উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ করা। একদিন রাবিয়া বসুর সাথে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে যখন সে আরাধনায় লিপ্ত ছিলেন তখন তার মাথার ওপর কোন শিকল দিয়ে বাধা ছাড়াই একটি ঝাড়বাতি উপরে জ্বলতে দেখা গিয়েছিল। সেই ঝাড়বাতিটির আলো বিচরিত হয়ে ঘরের চারপাশে আলোকিত করে তুলেছিল এবং মনে মনে বলল –
“ হায়! এ আমি কাকে আমার ঘরের দাসী বানিয়ে রেখেছি” এতো সামান্য মেয়ে হতে পারে না। এ হলো আল্লাহর প্রিয়জন।
এইরূপ ঘটনা ঘটার পরে মনিব তার পরের দিন সকালে রাবেয়া বাসরী কে দাসত্ব জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে দেন।
শিক্ষাজীবন (Education life)
রাবেয়া বশরী একাডেমিতে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি কিন্তু খুব অল্প বয়সেই মা-বাবার কাছ থেকে কুরআন, হাদিস, ফিকহ শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ছোট থেকেই রাবেয়া বসরীর মধ্যে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে কখনো পিছপা হননি।
তৎকালীন সময়ে একজন মহান সাধক ছিলেন যার নাম হল ইমাম হাসান বসরী। রাবেয়া তার কাছে গিয়ে ইলমে তাছাউফ ও মারেফাতের সূক্ষ্ম জ্ঞান অর্জন করেন। পরবর্তীতে রাবেয়া একজন কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
পিতার মৃত্যু (death of father)
খুব অল্প বয়সেই রাবেয়া বসরীর পিতার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে রাবেয়ার পরিবারে নেমে আসে আরও অভাব অনটন। তিনি তার বোনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন এবং আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা করতে মরুভূমিতে চলে গিয়েছিলেন। একজন তপস্বী হিসেবে অর্ধ নির্জন জীবন যাপন করতে শুরু করলেন।রাবেয়া বসরীকে প্রায়শই সাধু নারীদের রানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রাবেয়া বছরে ঈশ্বরের প্রতি বিশুদ্ধ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্য পরিচিত ছিলেন।
তিনি প্রার্থনা করলেন –
“হে প্রভু আমি যদি নরকের ভয়ে তোমার উপাসনা করি,
তবে আমাকে জাহান্নামে পুড়িয়ে দাও;
‘যদি আমি জান্নাত কামনা করার কারণে তোমার ইবাদত করি
তাহলে আমাকে জান্নাত থেকে বাদ দাও;
কিন্তু আমি যদি শুধু তোমারই জন্য তোমার উপাসনা করি
তবে তোমার অনন্ত সৌন্দর্যকে অস্বীকার করো না”
দর্শন এবং ধর্মীয় অবদান (Philosophy and religious contributions)
রাবেয়া বসরী ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী ত্যাগী মহিলা। যিনি চরম পূর্ণ এবং ধার্মিকতার জন্য বিখ্যাত। একজন নিবেদিত তপস্বী তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কেন তিনি দিন রাত উভয় সময় একহাজার প্রণাম করেন। তিনি উত্তরে জানিয়েছিলেন যে –
“আমি এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না; আমি এটা করি যাতে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেয়ামতের দিন এতে আনন্দিত হন এবং নবীদেরকে বলবেন, ‘একজন মহিলার বিষয়ে খেয়াল করুন। আমার সম্প্রদায় সম্পন্ন করেছে”
রাবেয়া বসরী তার আত্মত্যাগ এবং ঈশ্বরের ভক্তি তীব্র ছিল। তিনি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য তার জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। রাবেয়া বসরী যিনি ঐশ্বরিক প্রেমের মতবাদকে উপস্থাপন করেছিলেন এবং ব্যাপকভাবে প্রাথমিক ত্যাগীদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় এমন একটি ধার্মিকতার পদ্ধতি যা শেষ পর্যন্ত সুফিবাদ হিসেবে চিহ্নিত হবে। অনেক পণ্ডিতদের মতে রাবিয়ার শিক্ষা ধর্মীয় জগতে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।
রাবিয়া বসরী ঈশ্বরের প্রতি শক্তিশালী প্রেম এবং তার জীবন উৎসর্গ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে সুপরিচিতি ছিলাম। শুধুমাত্র রাবেয়া আধ্যাত্মিক নির্দেশনার জন্যই নয় বরং তার নৈতিকতার জন্যও অনেকের কাছে প্রিয় ছিলেন l
ঈশ্বরের প্রতি তার ভক্তি যথেষ্ট পরিমাণে ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণাবলীর মধ্যে তার মধ্যে ছিল নম্রতা এবং ব্রহ্মচর্য। তিনি অনেকের কাছে মূর্তিবান কারণ একা থাকা শুধুমাত্র ঈশ্বরের প্রেমে, ধর্মীয় আবেগ এবং ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনসংখ্যার জন্য উদাহরণ স্থাপন করার জন্য।
রাবেয়া বসরীকে ইসলামিক প্রেমের রহস্য বাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনে করা হয়।
শিক্ষক রাবিয়া (The teacher is Rabia)
বসরীর মরিময় সহরাবিয়ার শিষ্যদের একটি বৃত্ত রয়েছে। যেখানে তিনি তার শিষ্যদের পাশাপাশি উদীয়মান মুসলমানদের ইসলামীয় ধর্ম এর পরামর্শ দিতেন, এছাড়াও সুফি অনুশীলনও করাতেন। যদিও শারীরিক অবশিষ্ট কিছুই নেই তবুও তার আশেপাশে মানুষের জীবনে তার প্রভাব এখনো তার সম্পর্কে বলা গল্পগুলি দেখা যায়।
অন্য নামগুলো (Other names)
রাবিয়া বসরীর অন্যান্য নামগুলো হল –
রাবিয়া আল মুসমাইয়্যা
রাবিআ আল-আদাবিয়া
রাবিআ আল-কায়সিয়া
আদাবিয়া নামটি তার বংশকে বোঝায় এবং কায়শিয়া নামটি তার গোত্রকে বোঝায়।
বিরল ঘটনা (A rare occurrence)
একবার রাবেয়া বসরী তার এক হাতে আগুনের পাত্র এবং অন্য হাতে এক বালতি জল নিয়ে রাস্তায় দৌড়াতে দেখা যায়। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি কি করতে চাচ্ছেন তিনি বলেন যে –
“ আমি জাহান্নামের আগুন নিভিয়ে দিতে চাই, জান্নাতের পুরস্কার গুলো পুড়িয়ে ফেলতে চাই। এই সমস্ত জিনিসগুলো আল্লাহর পথে বাধা দেয়। আমি শাস্তির ভয়ে বা প্রতিশ্রুতির জন্য ইবাদত করতে চাই না”
“রাবেয়া বসরীর জীবনী – Rabia Basri Biography in Bengali” – মৃত্যু (death)
পরবর্তী জীবনে রাবিয়া বসরী একজন কবি হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল. অবশেষে তিনি 185 হিজরীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মতান্তরে 180 হিজরী 801/796 খ্রিস্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বলে মনে করা হয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই পোস্টটি “রাবেয়া বসরীর জীবনী – Rabia Basri Biography in Bengali” পড়ার জন্য।এই পোস্টটি “রাবেয়া বসরীর জীবনী – Rabia Basri Biography in Bengali” কেমন লাগলো তা কমেন্টের মাধ্যমে জানান। আশা করি পোস্টটি আপনাদের কে শাস্তি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে সাহায্য করেছে।আমরা এই সমস্ত তথ্যগুলি অনেক রকম ভাবে ভালোভাবে অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি।যদি কোনো তথ্য ভুল মনে হয়ে থাকে তাহলে মন্তব্য ফর্মটি পূরণ করে আমাদেরকে শেয়ার করতে পারেন।এরকম আরো মানুষের জীবনী সম্পর্কে জানতে আমাদের এই সাইটটিকে bongbio.com ফলো করুন।