(Ershad Sikder)রাক্ষস এরশাদ শিকদারের জীবনী।(Ershad Sikder Biography Full from in Bengali)

রাক্ষস এরশাদ শিকদার কে, জীবন পরিচয়,ফাঁসির কারণ মেয়েদের প্রতি লালসা(Ershad Sikder biography, Aspect of crime, identity of birth, reason of hanging and more information)এরশাদ শিকদারের জীবনী

আপনি কি জানেন কে এই রাক্ষস এরশাদ শিকদার কি তার পরিচয়?এই এরশাদ শিকদার ছিলেন একজন নামকরা খুনি,চোর এবং মেয়েদের প্রতি প্রচন্ড লালসা কারী পুরুষ।আপনি যদি এই রাক্ষস টির সম্বন্ধে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।এই আর্টিকেলটিতে আমরা রাক্ষসটির জীবনী এবং সমস্ত অন্ধকার জগতের সমস্ত দিকগুলি তুলে ধরেছি।

এরশাদ শিকদার কে?(Who is Ershad Shikder?)

এরশাদ শিকদার হলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নামকরা কুখ্যাত খুনি,চোর এবং অন্ধকার জগতের এক সরদার।রক্ত নিয়ে খেলা যার ছিল প্রতিদিনের রুটিন।

তিনি যে শুধু একজন নামকরা খুনি ছিলেন তা নয় তিনি একজন দুশ্চরিত্র, চোর,বলতে গেলে একটি মানুষ খেকো রাক্ষস।যিনি 16 থেকে 30 টি খুন করেছেন।মানুষের বুকের ওপরে রাজ করা যার ছিল প্রতিদিনের কর্ম।চিনি রেললাইনের কাঠ,পাত এছাড়াও প্রচুর জিনিস চুরির কাজের সাথে যুক্ত।

এরশাদ শিকদারের জন্ম পরিচয় এবং আরও তথ্য(Birth Identity of Ershad Shikder &More information)

বাংলাদেশের,ঝালকাঠি জেলায় নলছিটি উপজেলার তার মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম মাদার ক্রোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ শিকদার.ছোটবেলা থেকেই তার পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো ছেলে না একবেলা খাবার খেতে অনেক পরিশ্রম করতে হতো তার বাবা ও মাকে।এরশাদ সিকদার হল বাড়ির ছোট ছেলে।এরশাদ এর বয়স যখন 13 কঠিন এক অসুখে মারা যান তার বাবা.সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে তার মায়ের পক্ষে তো তার মা লোকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন।আরো কিছু তথ্য জানতে নিচের টেবিলটি দেখুন-

আসল নামএরশাদ সিকদার
জন্মের তারিখ 1955 সাল
বাবার নাম বন্দে আলী মিয়া
মায়ের নামজানা নেই
দাদার নামজানা নেই
জাতীয়তাবাংলাদেশ

অপরাধের সূচনা(Initiation of crime)

ছোটবেলা থেকেই এরশাদ শিকদার খুবই দুষ্টু ছিলেন.পাড়ায় এই ছেলে ওই ছেলের সাথে মারপিট করে সারাদিন বেড়াতো।

1966 সালে এরশাদ শিকদার খুলনার ঘাট এলাকায় চলে এলেন পুরো পরিবারকে নিয়ে।আস্তে আস্তে খুলনার ঘাট এলাকায় বসবাস করতে শুরু করলেন।এরশাদ শিকদারের মা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতে লাগলেন।এরশাদ এর দাদা ঘাটের কুলি এর কাজ করতে লাগলেন কিন্তু এরশাদ হলেনসেই সমস্ত কুলিদের নেতা  কাসিম সর্দারের সহকর্মী।

আস্তে আস্তে এরশাদ ছোটখাটো চুরি করতে লাগলেন কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই ধরা পড়ে যেতেন.ট্রলার থেকেও বিভিন্ন জিনিস চুরি করে নিতেন।

খুলনার ঘাটের কুলি দের নেতা কাসিম সর্দার থেকে পরিবর্তিত হয়ে নেতা হলেন আনজু সর্দার কিন্তু এরশাদ আস্তে আস্তে আনজু সর্দার কাছের মানুষ মানুষ হয়ে গেলেন।

আস্তে আস্তে (1977-1978 )সালের দিকে এরশাদ ছোটখাটো ডাকাতি শুরু করতে লাগলেন। এই সমস্ত অপরাধজগতের সূচনা হয় এরশাদ শিকদারের।

এরশাদ শিকদারের দল(Ershad Shikder’s team)

আস্তে আস্তে এরশাদের কাজের ধরন হয়ে উঠল আরো ভয়ানক।তিনি তার প্রথম দল গড়েন মাত্র 5 জনকে নিয়ে।সেই দলকে নিয়ে প্রথমে বিভিন্ন ডাকাতি চুরি এই সমস্ত কাজ গুলি করতে থাকলেন।

সময়ের সাথে সাথে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকল সাথে সাথে বাড়তে থাকল কাজের উদাহরণ আস্তে আস্তে রেললাইনের কার্ড চুরি  ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি করতেন।

এরশাদ তার দলগুলি নিয়ে নৌকো গুলি থেকে চাঁদা কাটতে শুরু করেন এবং ট্রলার গুলি থেকে গম চুরি করে করতে শুরু করেছিলেন।

রাজনৈতিক ক্ষমতা(Political power)

1988 খুলনার তৎকালীন 21নাম্বার বর্তমানে 8 নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার পদে যোগদান করলেন এরশাদ শিকদার।এতে তার সম্রাজ্য আরো ফুলে-ফেপে উঠতে লাগল।তিনি রেল এবং বিমানের জায়গা দখল করে গড়ে তুললেন বস্তি।এতে তৈরী করল ছোট ছোট বাড়ি সেগুলির মধ্যে অনেক মানুষের বসবাস বেড়ে গেল এবং কিছু কিছু মানুষ এরশাদ শিকদারের  খারাপ কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হতে লাগল।এই ভাবেই এরশাদ শিকদার তৈরি হলেন দক্ষিণাঞ্চলের অপরাধ জগতের এক আরেক নাম।

কিছু কিছু মানুষ এরশাদ শিকদারের এই সমস্ত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধাচারণ করত কিন্তু এরশাদ শিকদার সেই সমস্ত কিছু মানতে নারাজ যারা যারা এই সমস্ত বিরুদ্ধাচারণ করতো তাদের একটাই শাস্তি ছিল সেটি হল মৃত্যুদন্ড।

বরফ কল দখল(Grab the ice mill)

1991সালে কালীন সামরিক সরকারের পতন হয়।ক্ষমতায় আসেন PNP সরকার.অনেক এরশাদ শিকদার PNP তে যোগ দেন.আস্তে আস্তে এরশাদ শিকদারের সম্পত্তির তালিকায় যুক্ত হলো একটি বরফ কল।পরবর্তীকালে এই দলটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প।

 তৎকালীন বরফ কলের মালিক ছিলেন রফিক  নামক একটি ব্যক্তি।এরশাদ শিকদার রফিককে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তার ওই বড় কারখানা টি দখল করে নেন।

পরেই শুরু হতে থাকে  এরশাদ শিকদার এর নিয়ম কানুন.ঘাটের সমস্ত মানুষদের বলা হতো এই কারখানার থেকে ঘাটের সমস্ত মানুষদের বলা হতো এই কারখানার থেকে বরফ কেনার জন্য।বরফ না কেনা হলে তার জন্য মানুষদের শাস্তি ভোগ করতে হতো।

এই কারখানাটিতে একটি এয়ারকন্ডিশনার রুম ছিল যেকানে  রাত্রে চলতো মদ এবং মেয়েদের নিয়ে ফোয়ারা।অনেক  লোক এখানে থাকতেন এছাড়াও খবর সূত্রে জানা গেছে যে বাংলা সিনেমা এর এক নামকরা ভিলেন ও থাকতেন ওই সমস্ত অনুষ্টান এ।

মাত্রাহীন অপরাধ(Unfathomable crime)

আস্তে আস্তে এরশাদ হয়ে উঠলেন তৎকালীন 21 নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারএতে অপরাধ কাজকর্ম আরো বাড়তে থাকলো।সেই সময় তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পার্শ্ববর্তী 15 নম্বর ওয়ার্ডের  কমিশনার মুসিম উদ্দিন খান।

কোনো এক কারনে প্রতিদ্বন্দ্বী দল এরশাদ শিকদারের দলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।যেখানে এরশাদ শিকদারের একজন কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেননি।এতে এরশাদ শিকদারের সেই লোকটির উপর সন্দেহ জাগে,যে সেই মানুষটি হয়তো দলের কোনো তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে সেই কারণে এরশাদ শিকদার সেই লোকটিকে খুন করেন।

প্রমাণ লোপাট(Evidence is lacking)

এরশাদ শিকদার একটি ছোট পুকুরে চাষ করতেন রাক্ষুসে আফ্রিকান মাগুর।এরশাদ শিকদার তার সমস্ত খুন করা দেহগুলি সেই ডোবাতে ফেলে দিত।সেই সমস্ত মৃতদেহগুলি কে ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে নিত  রাক্ষুসে মাগুরমাছ গুলিএটি ছিল প্রমাণ লোপাটের একটি পদ্ধতি।এছাড়াও সমস্ত প্রমাণ লোপাটের জন্য অনেক রকম পদ্ধতি অনুসরণ করতেন।

খুন সংখ্যা(Number of murders)

পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী রেকর্ড অনুযায়ী এরশাদ নাকি 60 এর ও বেশি খুন করেছিলেন কিন্তু এই তথ্য সঠিক নয় কারণ কি তার মত রাক্ষসে মানুষ যে আরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল বলে মনে হয়।

বিবাহ(Marriage)

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে এরশাদ শিকদারের 6টির বেশি বিবাহের কথা জানতে পারা গেছে.তার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল খোদেজা বেগম।সংবাদমাধ্যমে  তার আরও একটি স্ত্রীর নাম জানা যায় যাকে তিনি তার বিলাসবহুল বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন।

এরশাদের প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগম এর চারটি সন্তান,তিন পুত্র এবং একটি কন্যা

এরশাদ শিকদারের ফাঁসি হওয়ার গল্প(The story of Ershad Shikder’s hanging)

এরশাদ শিকদারের বিরোধীদল একটি খুনের দায় হিসেবে এরশাদ সিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং পুলিশ এরশাদ শিকদার কে গ্রেপ্তার করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন।এরশাদ শিকদার তার ক্ষমতার প্রভাব দেখানোর জন্য তিনি ভেবেছিলেন পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে দেবেন এবং তার ক্ষমতার প্রভাবে তিনি বেরিয়ে চলে আসবেন কিন্তু অবশেষে তা হলো না।তার সমস্ত অপরাধ এর বিচার অনুযায়ী এরশাদ শিকদারের ফাঁসি ঘোষণা করা হয়।

রাক্ষস বধ(Kill the demon)

অবশেষে এ রাক্ষুষে নরপিসাজ এর ফাঁসি ঘোষণা করা হয়।

10 মে 2004 সালে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি হয়.

 ফাঁসি হওয়ার আগে এরশাদ শিকদার কে জেল থেকে দেয়া হয়েছিল খাসি এবং মুরগির মাংস. এরশাদ শিকদার সেই সমস্ত কিছু খেয়ে 6 ঘণ্টা ঘুম দেন.মৃত্যুদণ্ডের আগের বেশিরভাগ সময় তিনি  ঘুমিয়ে কাটিয়ে ছিলেন।

এই ভাবেই শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের বুকে রক্ত খাওয়া এক রাক্ষসের

উপসংহার(Conclusion)

আশা করি এই আর্টিকেলটি এরশাদ  শিকদারের জীবনী সম্বন্ধে অজানা তথ্য জানতে আপনাদের সাহায্য করবে।যদি কোন কোনো তথ্য মনে হয় তা মন্তব্য ফরমটি ফিলাপ আমাদের শেয়ার করতে পারেন।

মন্তব্য করুন